মঙ্গলবার, মে ১০, ২০১১

ট্যাবলেট কম্পিউটারের ইতিহাস

ট্যাবলেট কম্পিউটারের ইতিহাসের সূচনাটা শুনলে আপনার চোখ কপালে উঠে মাথাকে ছাড়িয়ে যেতেও পারে! যদি বলি ট্যাবলেট কম্পিউটিং এর জড়িত প্রথম প্যাটেন্টটি ১৮৮৮ সালের! কি বিশ্বাস হয়? সে বছর প্রথম হ্যান্ডরাইটিং ভিত্তিক ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসের প্যাটেন্ট করানো হয়। তারপর ১৯১৫ সালে কোনো কিছুই উপর হাতের স্পর্শের মাধ্যমে লেখা চিনতে পারার পূর্ণাংগ একটি হ্যান্ডরাইটিং সিস্টেমের প্যাটেন্ট দেয়া হয়। তবে ১৯৫৬ সালে প্রথম ট্যাবলেট কম্পিউটারের মডেলটি আলোর মুখ দেখে। সেবছরই কীবোর্ডের বদলের স্পর্শের মাধ্যমে ইনপুট নিতে সক্ষম এমন আধুনিক ডিজিটাল কম্পিউটারের মডেল প্রদর্শন করেন বিজ্ঞানীরা।

১৯৮০ সাল নাগাদ বিশেষায়িত বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহারের জন্য বেশ কিছু কোম্পানী নিয়মিতই ট্যাবলেট বানাতে থাকে।এর মধ্যে পেনসেপ্ট, কমিউনিকেশন্স ইন্টেলিজেন্স কর্পোরেশন, লাইনাস অন্যতম। আর গো কর্প নামে একটি কোম্পানী বের করেছিল ট্যাবলেট কম্পিউটারের জন্য পেনপয়েন্ট অপারেটিং সিস্টেম। লিনাক্স চালিত প্রথম ট্যাবলেট ছিল ফ্রন্টগিয়ারের প্রোগিয়ার। এতে লিনাক্সের স্ল্যাকওয়ার ভার্সন ব্যবহার করা হয়েছিল।
২০০০ সালে মাইক্রোসফটের মাধ্যমে বিশ্ববাসী পরিচিত হয় মাইক্রোসফট ট্যাবলেট পিসির সাথে। সে বছরই প্রথম মাইক্রোসফট উইন্ডোজের ট্যাবলেট ভার্সন ভিত্তিক কম্পিউটার বাজারে আসে। প্রথমদিকে এর ব্যবহারকারী ছিল শুধুমাত্র বাণিজ্যিক ক্রেতারা। আর এর ব্যবহার ছিল বিভিন্ন নোট লেখা এবং সম্পাদনার মধ্যে সীমাবদ্ধ।
এর পরের ১০ বছরে বলার মতো কোনো পরিবর্তন আসেনি এই ট্যাবলেট কম্পিউটিং বিশ্বে। সাধারন মানুষের কাছে বিভিন্ন কারণে জনপ্রিয় হয়নি এই ট্যাবলেট। এর মধ্যে একটি বড় কারণ ছিল ট্যাবলেট কম্পিউটারের জন্য আলাদা এপ্লিকেশনের অভাব। প্রচলিত কোনো ডেস্কটপ এপ্লিকেশনই ট্যাবলেট-এ ঠিকঠাক মতো রান করতো না। আর হার্ডওয়ার এবং ব্যবহারের সমস্যা তো ছিলই। আর টাচ প্রযুক্তিও মানুষের মন কাড়ার মতো ছিল না সে সময়ের ট্যাবলেটগুলাতে।
কিন্তু এতোমধ্যেই মোবাইল টেকনোলজি অনেক এগিয়ে যায়। স্মার্টফোনের ব্যবহার দিনে দিনে জনপ্রিয় হতে থাকে। টাচস্ক্রীণ টেকনোলজি মোবাইলের কীবোর্ডের প্রয়োজনকে ভুলিয়ে দেয় আমাদের। ২০০৭ সালে এপল বাজারে আনে বড় টাচস্ক্রীণবিশিষ্ট স্মার্টফোন, আইফোন যা একই সাথে পরিবর্তন করে দেয় পুরো বিশ্ব মার্কেট মানুষের পছন্দকে। সেই থেকে সব মোবাইল নির্মাতাই উঠে পড়ে লেগে যায় মোবাইল ফোনের পেছনে। প্রতিযোগীতা ছিল বড় টাচস্ক্রীণ ফোনের। এভাবেই সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছিল ফোনের ডিসপ্লের আকার এবং এর ফিচার।
সেই এপলই ২০১০ সালে আবার মার্কেটে নিয়ে আসে এক যুগান্তকারী ডিভাইস, আইপ্যাড। যেটি কিনা স্পর্দার আড়ালে থাকা ট্যাবলেটের নতুন রুপ মাত্র। আইডিসি ২০১০ সালের ২০ মে ট্যাবলেট কম্পিউটারের নতুন সংগা প্রদান করে। এতে বলা হয় ট্যাবলেট কম্পিউটারের মনিটরের আকার হবে ৭ থেকে ১২ ইঞ্চির মধ্যে। এতে থাকবে এআরএম প্রসেসরভিত্তিক আলাদা অপারেটিং সিস্টেম। বিভিন্ন ধরণের এপ্লিকেশন চালানো সম্ভব হবে এখানে। এর ফলে ইবুক রীডারের সাথে এর পার্থক্য দৃশ্যমান হবে। আর নেটওয়ার্কিং ফিচার স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে হবে। রিপোর্টে আরো বলা হয় ২০১৪ সালের মধ্যে বছরে ৪৬ মিলিয়ন ট্যাবলেট কম্পিউটার বিক্রি হবে, ২০১০ সালে যার পরিমাণ ছিল ৭.৬ মিলিয়ন।
এর বড় প্রমাণ হচ্ছে ২০১১ সালের জানুয়ারীতে হয়ে যাওয়া কনজুমার ইলেক্ট্রনিক শো যেখানে ৮০টির উপর নতুন ট্যাবলেটের ঘোষণা আসে। আর এপলের আইপ্যাডের সাথে প্রতিদ্বন্দীতার জন্য এই তালিকায় নাম লেখায় মটোরোলা, স্যামসাং, তোশিবা, আসুস, এইচটিসির মতো বড়বড় সব কোম্পানী।
এক নজরে ট্যাবলেট কম্পিউটারের টাইমলাইন হিস্টরি

১৮৮৮- এলিশা গ্রে হ্যান্ডরাইটিং বুঝতে সক্ষম এমন ইলেক্ট্রিক ডিভাইসের ধরণার প্যাটেন্ট পান।
১৯১৫- হ্যান্ডরাইটিং বুঝার জন্য ইউজার ইন্টারফেসের প্যাটেন্ট প্রদান।
১৯৪২- হ্যান্ডরাইটিং ইনপুটের জন্য টাচস্ক্রীণের প্যাটেন্ট প্রদান।
১৯৫০- টম ডায়মন্ড পেন বিশিষ্ট ইলেক্ট্রিক ট্যাবলেটের মডেল তৈরি করেন, যেখানে হ্যান্ডরাইটিং এর মাধ্যমে রিয়েল টাইম টেক্সট ইনপুট করা সম্ভব ছিল।
১৯৬০- আরএএনডি ট্যাবলেট বানানো হয়। জেরক্স পেন ইনপুট ভিত্তিক নোটবুক কম্পিউটারের ধারণা প্রদান করে, যার নাম ছিল ডাইনাবুক। তবে এই মডেল আলোর মুখ দেখেনি।
১৯৬৬- সায়েন্স ফিকশন স্টার ট্রেক টিভি সিরিজে টাচস্ক্রীণভিত্তিক ইলেক্ট্রনিক ক্লিপবোর্ড দেখানো হয়।
১৯৮২- পেনসেপ্ট সর্বপ্রথম কীবোর্ড আর মাউসের বদলে হ্যান্ডরাইটিংভিত্তিক ট্যাবলেট বাজারে আনে।
১৯৮৫- সর্বসাধারণের ব্যবহারের জন্য হ্যান্ডরাইটিং ইনপুটের ট্যাবলেট বাজারে আসে। পেনসেপ্ট এবং সিআইসি একই সাথে দুইটি ভিন্ন ডিভাইস আনে সে বছর। অপারেটিং সিস্টেম ছিল ডজ।
১৯৮৯- গ্রিড সিস্টেম পোর্টেবল ট্যাবলেট গ্রিডপ্যাড বাজারে আনে। এতেও ডজ ব্যবহার করা হয়েছিল। ওয়াং ল্যাবরেটরিস ডজে ফিস্টাইল নামে নতুন একটি ফিচার যুক্তি করে যাতে ব্যবহারকারীরা ভয়েস এবং টাচের মাধ্যমে কাজ করাও আওরো স্বাধীনতা পান।
১৯৯১- গো(GO) কর্পোরেশন বের করে ট্যাবলেটের জন্য আলাদা অপারেটিং সিস্টেম পেনপয়েন্ট ওএস। এতে টাচ ফিচার এর নতুন ব্যবহার দেখে বিশ্ববাসী যা কিনা এখন আমরা মোবাইলেই দেখে অভ্যস্থ।
১৯৯২- মাইক্রোসফট বের করে উইন্ডোজ ফর পেন কম্পিউটিং নামের প্রথম ট্যাবলেটভিত্তিক উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম। আইবিএম থিংকপ্যাড নামের ট্যাবলেট বাজারে আনার ঘোষণা যেয় যেটিতে পেনপয়েন্ট ওএস ব্যবহার করা হবে বলে জানানো হয়।
১৯৯৩- ফুজিতসু বের করে পকেট পিসি নামক ট্যাবলেট পিসি যেটিতে প্রথম ওয়ারলেস ল্যান কার্ড ব্যবহার করা হয়েছিল। এপল ঘোষণা দেয় স্টাইলাসভিত্তিক হ্যান্ডরাইটিং পিডিএ, এপল ম্যাসেজপ্যাডের। তবে এটি তেমন সফলতা পেতে ব্যর্থ হয়। আইবিএম এই বছরই থিংকপ্যাড বাজারে রিলিজ দেয় দুইটি ভিন্ন ভিন্ন মডেলে। আমেরিকান মোবাইল অপারেটর এটিএন্ডটি পেনপয়েন্ট অপারেটিং সিস্টেমের ওয়ায়লেস কমিউনিকেশনের জন্য ইও পার্সোনাল কমিউনিকেটর বের করে।
২০০১- বিল গেটস উইন্ডোজ এক্সপি ট্যাবলেট পিসি এডিশন চালিত প্রথম ট্যাবলেট পিসির প্রোটোটাইপ প্রদর্শন করেন।

২০০৩- ফিংগারওয়ার্কস নামক প্রতিষ্ঠান আধুনিক টাচ টেকনোলজির উন্নয়নে সফলতার মুখ দেখে।
২০০৬- উইন্ডোজ ভিসতা রিলিজ হয় যেখানে ট্যাবলেট পিসির জন্য প্রয়োজনীয় সফটওয়ার সাপোর্ট অন্তর্ভুক্ত ছিল।
২০০৭- এক্সিট্রন ম্যাকের হার্ডওয়ার এবং ম্যাক ওএস এক্স বিশিষ্ট মডবুক বাজারে আনে।

২০০৮- এইচপি তাদের মাল্টিটাচ ট্যাবলেট, এইচপি টাচস্মার্ট টিএক্স২ বের করে।
২০০৯- আসুস মাল্টিটাচ ফিচারবিশিষ্ট ইইই পিসির ঘোষণা দেয়।

২০১০- বছরের শুরুতেই এপল ঘোষণা দেয় এপল আইওএস ভিত্তিক এপল আইপ্যাডের। স্যামসাং বছরের ২য় অর্ধে বের করে ৭’’ ডিসপ্লে বিশিষ্ট গ্যালাক্সী ট্যাবের। এইচপি উইন্ডোজ ৭ চালিত স্লেট পিসি বাজারে আনে।
২০১১- মটোরোলা জুম ট্যাবলেটের ঘোষণা দেয়। একইসাথে স্যামসাং ও ঘোষণা দেয় গ্যালাক্সী ট্যাবের নতুন ১০’’ ভার্সনের। এইচটিসি সহ অন্য কোম্পানীও পিছিয়ে নেই। তারাও কিছুদিনের মধ্যে বাজারে আনছে তাদের ট্যাবলেট পিসি।
  1. ট্যাবলেট কম্পিউটারের অপারেটিং সিস্টেম
  2. ট্যাবলেট কম্পিউটারের বিক্রি শীর্ষে
  3. ট্যাবলেট কম্পিউটারের সুবিধা-অসুবিধা
  4. ট্যাবলেট কম্পিউটার
  5. বিভিন্ন ধরণের ট্যাবলেট কম্পিউটার

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন