রবিবার, জানুয়ারী ২৩, ২০১১

ফটোশপ টিউটোরিয়াল Photoshop Bangla Tutorial Part – 1


ইমেজ এডিটিং এর ক্ষেত্রে এডবি ফটোশপকে বলা হয় ইন্ডাষ্ট্রি ষ্ট্যান্ডার্ড। এর ব্যবহার অন্যান্য সফটঅয়্যার থেকে কিছুটা ভিন্ন, যেকারনে অনেকেই কিভাবে শুরু করবেন তা নিয়ে সমস্যায় পড়েন। এমনকি বই কিংবা ভিডিও টিউটোরিয়াল ব্যবহারের পরও মনে হয় কোথায় যেন কিছু বাদ পড়ে যাচ্ছে। এবিষয়ে সহায়তা করার জন্য ধারাবাহিকভাবে ফটোশপের টিউটোরিয়াল প্রকাশ করা হচ্ছে। ইন্টারনেটে এধরনের টিউটোরিয়ালের সুবিধে হচ্ছে শিক্ষার্থী অনায়াসে কোন বিষয়ে প্রশ্ন করতে পারেন। এক শিক্ষার্থী অন্যের সাথে যোগাযোগও করতে পারেন এর মাধ্যমে।
প্রথমে কিছু সাধারন আলোচনা সেরে নেয়া যাক
ফটোশপ কেন ব্যবহার করবেন
ফটোশপ কি ? একেবারে সঠিকভাবে না জানলেও মোটামুটি ধারনা রয়েছে সকলেরই। এমনকি কম্পিউটার ব্যবহার করেন না এমন ব্যক্তিরও। এটাই বলে দেয় এর জনপ্রিয়তা কতখানি। এক কথায়, ইমেজ এডিটিং এর ক্ষেত্রে বিশ্বের ১ নং সফটওয়্যার। এই কথায় বিষয়টি পরিস্কার হয় যতটুকু ঘোলাটে হয় তারচেয়ে বেশি। ইমেজ এডিটিং কি জিনিষ ? কে সেকাজ করে ? আমার সেটা প্রয়োজন কেন ? ইত্যাদি ইত্যাদি।
যারা প্রফেশনাল কাজ করেন, অথাৎ চাকরী করেন কিংবা অর্থ উপার্জনের জন্য নিজে কাজ করেন তারা ফটোশপ ব্যবহার করেন বিজ্ঞাপন, লিফলেট, পত্রিকা, বইয়ের প্রচ্ছদ, পোষ্টার থেকে শুরু করে সব ধরনের ডিজাইনের কাজে। যারা ভিডিও এডিটিং কিংবা এনিমেশনের কাজ করেন তাদেরও ছবির কাজ করতে হয় এখানেই। প্রোগ্রামার, ওয়েব ডিজাইনাররা তাদের ছবির অংশটুকু করে নেন ফটোশপে। ফটোগ্রাফাররা তাদের ছবি ঠিক করেন ফটোশপে। এর কোনটিই যদি আপনার প্রয়োজন না হয় তাহলে শখের বিষয়টি মনে করুন। ক্যামেরায় (অথবা মোবাইল ফোনে) ছবি উঠানোর শখ নিশ্চয়ই আছে। এবং লক্ষ্য করেছেন আপনার ছবি একটা দামী পত্রিকার ছবির মত উজ্জ্বল, ঝকঝকে হয় না। তারা দামী ক্যামেরা ব্যবহার করে, একাজে দক্ষ একথা মনে রাখার পরও আরেকটা বিষয় উল্লেখ করতে হয়, ছবি সরাসরি ঝকঝকে হয় না। কাজটি ফটোশপে করে নেয়া হয়।
অথবা বিয়ে-জন্মদিন-ঈদ-বড়দিন-পুজায় কাউকে নিজের তৈরী কার্ড দিতে চান। সেখানে নিজের কিংবা প্রিয় কারো ছবি, অথবা নিজের উঠানো একটা ফুলের ছবি বসিয়ে দিতে চান। একাজটিও করে নিতে পারেন সবার সেরা সফটওয়্যারে।
আর যদি আরো বড় ধরনের কাজের দিকে যান, যেমন ডিজিটাল পেইন্টিং (সুপারম্যান, স্পাইডারম্যান, আয়রনম্যান জাতিয় যত কমিকের কথা মনে করতে পারেন) তাহলেও ফটোশপ।
এককথায় যেখানে ইমেজ সেখানেই ফটোশপ। প্রিন্ট, ওয়েব, মাল্টিমিডিয়া, ভিডিও সব যায়গায়।
ফটোশপের সবই ভাল, সবচেয়ে ভাল কাজ করা যায়, একথা জানার সাথেসাথে আরেকটি কথা জেনে নেয়াই ভাল। এর ব্যবহার খুব সহজ না। ইমেজ এডিটিংএর বহু সফটওয়্যার পাওয়া যাবে যেগুলির ব্যবহার ফটোশপের তুলনায় সহজ। সেতুলনায় ফটোশপ তৈরী হয়েছে পেশাদারীদের জন্য।
কাজেই সেরা সফটওয়্যার দিয়ে যদি সেরা ফল পেতে চান তাহলে কিছু অতিরিক্ত সময়, পরিশ্রম, মেধা ব্যয় করতেই হবে। বছরের পর বছর চেষ্টা করে তবেই একজন ফটোশপে দক্ষ হয়। যদি তাতে আপত্তি থাকে তাহলে সহজ কোন সফটওয়্যার বেছে নেয়াই ভাল।
কোন ভার্শন ব্যবহার করবেন
এখানে দেখানো টিউটোরিয়ালগুলি তৈরীর জন্য ব্যবহার করা হয়েছে সিএস-৩ নামের ভার্শনটি। বর্তমানে সিএস-৫ বাজারে। কাজেই প্রশ্ন করতেই পারেন কোন ভার্শন মেনে কাজ করবেন।
যারা পেইন্টিং এর কাজ করেন তারা পুরনো ভার্শন ব্যবহার করেন। উদাহরন, বিশ্বের সবচেয়ে বড় কমিক নির্মাতা মারভেল ব্যবহার করে ভার্শন ৩ অথবা ৪। পরিচিত গ্রাফিক ডিজাইনারদের জিজ্ঞেস করলে জানবেন তারাও পুরনো কোন ভার্শন ব্যবহার করে। কাজেই আপনাকে লেটেষ্ট ভার্শন ব্যবহার করতেই হবে এমন কথা নেই। একটিমাত্র যায়গায় নতুন ভার্শন বেশি কার্যকর, তা হচ্ছে ফটোগ্রাফ রিটাচিং।
নতুন এবং পুরনো ভার্শনে পার্থক্য থাকলে বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। কাজেই ফটোশপের ভার্শন যাই হোক না কেন কাজ টিউটোরিয়াল বুঝতে সমস্যা হবে না। ভার্শন ৫.৫ থেকে পরবর্তী যেকোন ভার্শন ব্যবহার করা যেতে পারে।
ভার্শন বাছাইয়ের জন্য একটিমাত্র বিষয় বিবেচনায় আনতে পারেন। যদি কম্পিউটারের মেমোরী (র‌্যাম) ১ গিগাবাইটের বেশি হয় তবে লেটেষ্ট ভার্শন ব্যবহার করুন। অথবা মানানসই কোন ভার্শন ব্যবহার করুন।
কি প্রয়োজন
ফটোশপ উইন্ডোজ এবং ম্যাকে একইভাবে কাজ করে। এই টিউটোরিয়ালগুলি উইন্ডোজের জন্য হলেও আপনি অনায়াসে ম্যাকে কাজ করতে পারবেন। কাজেই আপনার প্রথম প্রয়োজন উইন্ডোজ অথবা ম্যাক অপারেটিং সিষ্টেমের একটি কম্পিউটার। সেখানে ফটোশপ সফটঅয়্যার ইনষ্টল করা।
নতুন ভার্শনের ফটোশপ যথেষ্ট বড় সফটঅয়্যার। কাজেই শক্তিশালি প্রসেসর, যথেষ্ট পরিমান মেমোরী, হার্ডডিস্কে যথেষ্ট পরিমান যায়গা এগুলিও প্রয়োজন।
নিখুত কাজের জন্য উন্নতমানের মাউস প্রয়োজন। গ্রাফিক পেন ব্যবহার করলে আরো নিখুতভাবে কাজ করা সম্ভব হবে।
কাগজ থেকে ছবি ব্যবহার করতে হলে স্ক্যানার প্রয়েজিন হবে। এছাড়া ছবি উঠানো প্রয়োজন হলে ক্যামেরা থাকা চাই। ফিল্ম ক্যামেরার তুলনায় ডিজিটাল ক্যামেরা বেশি সুবিধাজনক।
উল্লেখ করা সবকিছু যদি নাও থাকে, কম্পিউটারে শুধুমাত্র ফটোশপ ইনষ্টল করেই কাজ শুরু করুন।
কিছু প্রয়োজনীয় বিষয়
ফটোশপ ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় কিছু বিষয় সংক্ষেপে জেনে নিন। কম্পিউটারে ইমেজ দুধরনের হয়, বিটম্যাপ এবং ভেক্টর। ফটোশপ কাজ করে বিটম্যাপ ইমেজ নিয়ে অন্যদিকে ইলাষ্ট্রেটর, কোরেল ড্র ইত্যাদি সফটঅয়্যার কাজ করে ভেক্টর নিয়ে। বিটম্যাপকে রঙতুলি দিয়ে আকা ছবি এবং ভেক্টরকে পেনসিলে আকা ছবির সাথে তুলনা করতে পারেন (যদিও পার্থক্য অনেক)।
বিটম্যাপ ছবি তৈরী হয় পিক্সেল নামের ছোট ছোট ডট দিয়ে। খবরের কাগজের ছবি ভালভাবে লক্ষ্য করলে দেখবেন সেগুলিও ছোট ছোট ডট দিয়ে তৈরী। ডটের ঘনত্ব কম হলে সেগুলি দেখা যায়, বেশি হলে ডট বোঝা যায় না। এই ঘনত্ব যত বেশি ছবির মান তত ভাল।
কম্পিউটার মনিটর কিংবা অন্য যে কোন ডিসপ্লেতে ছবির মাপ হিসেব করা হয় পিক্সেল দিয়ে। আপনার মনিটরের রেজুলুশন যদি ১০২৪-৭৬৮ হয় তাহলে ১০২৪-৭৬৮ পিক্সেলের একটি ছবি ১০০% ভিউতে পুরো স্ক্রিন জুড়ে থাকবে। প্রিন্টের সময় হিসেব করা হয় ইঞ্চি অথবা সেন্টিমিটারে। ফটোশপে যে কোনটি হিসেব করে ছবির মাপ ঠিক করা যায়।
ফটোশপের নিজস্ব ফাইল ফরম্যাপ PSD (ফটোশপ ডকুমেন্ট)। এই ফরম্যাটে সবচেয়ে ভাল মান পাওয়া যায়। অসুবিধে হচ্ছে এটা ব্যবহারের জন্য ফটোশপই প্রয়োজন হয় এবং ফাইল সাইজ খুব বড় হয়।
সব যায়গায় ব্যবহারের জন্য সাধারন ফরম্যাট জেপেগ (JPG, JPEG)। এতে ফাইলসাইজ সুবিধেমত ছোট করা যায়। অন্য কম্পিউটার, ওয়েব, মাল্টিমিডিয়া ইত্যাদির জন্য উপযোগি।
জেপেগ ফরম্যাটে ছবির মান নষ্ট হয় বলে প্রিন্টের জন্য ব্যবহার করা হয় না। ফটোশপের করা ডিজাইন যদি প্রিন্টের জন্য দিতে হয় তাহলে সরাসরি ফটোশপ অথবা TIFF অথবা অন্য কোন সুবিধেজনক ফরম্যাট ব্যবহার করুন।
যে কোন ডিসপ্লের জন্য আরজিবি (রেড-গ্রীন-ব্লু) এই তিন রঙের মোড ব্যবহার করা হয়। আর ৪ রঙা প্রিন্টের জন্য ব্যবহার হয় সিএমওয়াইকে (সায়ান-ম্যাজেন্টা-ইয়েলো-ব্লাক)। এক ধরনের মোড অন্য যায়গায় ব্যবহার করা যাবে না অথবা ভাল ফল পাওয়া যাবে না। শুরুতেই মোডের বিষয়টি মাথায় রাখুন।
ফটোগ্রাফির জন্য ফটোশপ
ক্যামেরায় উঠানোর ছবির আলো ঠিক করা থেকে শুরু করে সবধরনের প্রয়োজনীয় কাজ করে নিতে পারে ফটোশপে। জেপেগ ইমেজ সরাসরি ব্যবহার করা গেলেও ক্যামেরা-র সরাসরি ব্যবহার করা যায় না। এজন্য বিনামুল্যের এডবি ক্যামেরা-র প্লাগইন ইনষ্টল করে নিতে হয়।
ফটোশপ এবং অন্য সফটঅয়্যার
ইমেজ এডিটিং এর কাজ কি ফটোশপেই করতে হবে ?
এর উত্তর নির্ভর করে ব্যবহারকারীর ওপর। যদি কাজ অল্প হয় তাহলে খুব ছোট, সহজ কোন সফটঅয়্যার দিয়ে কাজ সেরে নিতে পারেন। আর যদি জটিল কাজ প্রয়োজন হয় তাহলে ফটোশপ। তারপরও ফটোশপ সব বিষয়ে অন্য সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে এটা ধরে নেবেন না। উদাহরন, পেইন্টারের পেইন্টিং ফটোশপের চেয়ে সুবিধেজনক মনে হতে পারে। কিংবা ফটোগ্রাফির জন্য ফটোশপের চেয়ে এডবি লাইটরুম বেশি কার্যকর মনে হতে পারে। সবকিছুই শিখবেন ধরে না নিয়ে একটা বেছে নিয়ে সেটাই ভালকরে শিখুন।

1 টি মন্তব্য:

  1. অসাধারন একটি ট্রিকস। ধন্যবাদ এমন একটি টিরিক্স প্রকাশ করার জন্য।আসলে প্রত্যেকের সচেতন হওয়া উচিত ।আপনার এই পোস্ট অনেক উপকারে আসবে আমার বিশ্বাস । এর আগেও একটা টিপস্ পেয়েছিলা এই টিপসইটও অনেক উপকারী। যার দরকার হবে দেখতে পারেন। আবারো লেখককে ধন্যবাদ না দিয়ে পারছি না। তবে এরকম আরো একটি লেখা পড়েছিলাম ।। এখানে>http://muktomoncho.com/archives/1449

    উত্তরমুছুন