মঙ্গলবার, মে ১০, ২০১১

প্রযুক্তির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ: দেশে এলো আইপি টেলিফোনী


সত্যি কথা বলতে বাংলাদেশ প্রযু্‌ক্তিতে তেমন অগ্রসর হতে পারেনি। তবে প্রযুক্তি মনস্ক মানব সম্পদের উন্নয়ন ঘটেছে। এটা কম প্রাপ্তি নয়। ইতিমধ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে ঘটে গেছে অনেক চড়াই-উৎরাই। তথাপি প্রযুক্তি নিয়ে আমাদের আগ্রহের কমতি নেই এতটুকু। আইএসপি প্রতিষ্ঠানসমূহ গত বছর আইপি টেলিফোনীর অনুমোদন পেলেও এই কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি। অপেক্ষার পালা শেষ এবার। আমরা সামিল হতে যাচ্ছি প্রযুক্তির অগ্রযাত্রায়। গোটা বিশ্ব যেখানে অগ্রসরমানতার দিকে সেখানে আমাদেরই বা পিছিয়ে পড়া কী মানায়? অবশেষে বিটিআরসির উদ্যোগে দেশে উন্মুক্ত হলো আইপি টেলিফোনী। প্রযুক্তি ক্ষেত্রে একটি নতুন দিগন্তের পথ উন্মোচিত হলো।
আইপি টেলিফোনী কি
ইন্টারনেট ভিত্তিক একটি টেলিফোন সেবা আইপি টেলিফোনী। এটি ইন্টারনেট প্রটোকল টেলিফোনী সংক্ষেপে আইপি টেলিফোনী নামেই পরিচিত। টেলিযোগাযোগ ক্ষেত্রে আইপি টেলিফোনী ইন্টারনেট প্রটোকল নির্ভর এমন এক ফোন সার্ভিস যা ইন্টারনেটের মাধ্যমে অত্যন্ত স্বল্প খরচে কথা বলার সেবা দিতে সক্ষম। দেশে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারের মাধ্যমে আইপি টেলিফোনী প্রক্রিয়া চালু হয়েছে। এতে প্রত্যেক সার্ভিস প্রোভাইডার বা অপারেটরের একটি নিজস্ব কোড নম্বর থাকবে। এই সার্ভিস পেতে হলে একটি মাল্টিমিডিয়া কম্পিউটারে ইন্টারনেট সংযোগ থাকা বাধ্যতামূলক কিংবা একটি আইপি টেলিফোন সেট হলে চলবে।
আইপি টেলিফোন সেট
আইপি টেলিফোন সেট
কবে থেকে শুরু হওয়ার কথা ছিল
এখানে বলা সমীচিন আমরা বরাবর প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে পিছনের কাতারে। আমাদের দেশের একজন তথ্যপ্রযুক্তিবিদ বলেছেন, প্রযু্‌ক্িততে আমাদের আট বছর পরপর বোধদয় ঘটে। অর্থাৎ এখন একটি উন্নত দেশে যে প্রযুক্তি এসেছে তা আমাদের দেশে আসবে ঠিক আট বছর পর। উল্লেখ্য, ২০০৯ ইং সালের আগষ্ট মাসে বিটিআরসি ৩২টি আইএসপি প্রতিষ্ঠানকে এই সেবার অনুমোদন দেয়। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের নিকট হতে ২৫ লাখ টাকা ব্যাংক গ্যারান্টি নেয়া হয়। আর সে সময় এইসব প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, তিন মাসের মধ্যে এই সেবা চালু হবে। কিন্তু বাস্তবে তা ঘটেনি। বলা যায়, এতোদিন এক প্রকার জটিলতার মধ্যে দিয়ে সময় পার হয়ে গিয়েছে। তথাপি শুরুর এ প্রক্রিয়া প্রযুক্তি মনস্কদের জন্য একটি শুভ সংবাদ বটে!
কবে থেকে এই প্রযু্ক্তি কার্যকর হলো
আমাদের দেশে আইপি টেলিফোনী টেলিকমিউনিকেশনে একটি নতুন প্রযুক্তি। যদিও উন্নত দেশে এই প্রযুক্তি অনেক আগে থেকে এসেছে। গত বছর এ নিয়ে যথেষ্ট তৎপরতা লক্ষনীয় ছিল। অবশেষে দেরিতে হলেও গত ১৬ মার্চ ২০১০ ইং তারিখ থেকে আমাদের দেশে আইপি টেলিফোনী কার্যকর হলো। অর্থাৎ গ্রাহকদের জন্যে উন্মুক্ত করা হলো এই প্রথম একযোগে ১৮টি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। উল্লেখ্য, গত বছর বিটিআরসি ৩২ আইএসপি প্রতিষ্ঠানকে এ সেবার জন্য অনুমতি দেয়। কিন্তু নানা কারণে এ সেবা চালু হয়নি। ১৮টি প্রতিষ্ঠান ছাড়া বাকী ১৪টি প্রতিষ্ঠান অচিরেই এ কার্যক্রম শুরু করবে বলে জানা গেছে।
যেসব প্রতিষ্ঠান এই সেবা দিচ্ছে
সম্পূর্ণ দেশীয় উদ্যোক্তাদের দ্বারা এই সেবা কার্যক্রম শুরু হচ্ছে এটা খুবই আশার কথা। ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার সংক্ষেপে আইএসপি প্রতিষ্ঠানসমূহ আইপি টেলিফোনী সেবা প্রদান করতে যাচ্ছে। এ যাত্রায় অংশ নিয়েছে মোট ১৮টি আইএসপি প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানসমূহ হচ্ছে ইনফরমেশন সার্ভিসেস নেটওয়ার্ক লিঃ, বিডিকম অনলাইন লিঃ, অ্যাডভান্সড ডেটা নেটওয়ার্ক সিস্টেম লিঃ, অগ্নি সিস্টেমস লিঃ, বেক্সিমকো, ব্রাকনেট, বিটিএস কমিউনিকেশনস লিঃ, কানেক্ট বিডি লিঃ, ঢাকা কম লিঃ, গ্রামীন সাইবারনেট লিঃ, গ্লোবাল এক্সেস লিঃ, এইচআরসি টেকনোলজিস লিঃ, ইননোভেটিভ অনলাইন লিঃ, লিংক থ্রি টেকনোলজিস লিঃ, মেট্রোনেট বিডি লিঃ, অপটিমাক্স কমিউনিকেশন লিঃ, রয়াল গ্রিন অনলাইন লিঃ এবং টেলনেট কমিউনিকেশন লিঃ।
আইএসপি প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রস্তুতি
অনুমোদন প্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানসমূহে পুরোদমে কাজ অব্যাহত রয়েছে। খুব শীঘ্রই তাদের অফিসিয়াল কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে। এই মুহূর্তে অনেক প্রতিষ্ঠানসমূহ প্লাটফরম উন্নয়ন নিয়োজিত রয়েছেন এবং আবার অনেকে প্লাটফরম উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন করেছেন। এখন শুধু আনুষ্ঠানিকতার অপেক্ষায়। অফিসিয়াল কার্যক্রম শুরু হওয়া মাত্র এই সব প্রতিষ্ঠান সমূহ ব্রশিউর এর মাধ্যমে সকল বিষয়ে সুস্পষ্ট তথ্য দিতে সক্ষম হবে।
আইপি টেলিফোনীর আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি
এটা ঠিক একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আইপি টেলিফোনী কার্যকর হবে। এক্ষেত্রে যেসব আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতির প্রয়োজন তা হচ্ছেঃ
১. একটি আইপি টেলিফোন সেট- বাজারে এই ধরনের সেট পাওয়া যাবে যার দাম আনুমানিক ৫০০০/৬০০০ টাকা থেকে শুরু হবে।
২. মডেম/ অ্যাডাপ্টার- আইপি টেলিফোনের সঙ্গে অ্যাডাপ্টার ইন্টারনেট সংযোগের জন্য গেটওয়ে হিসেবে কাজ করবে। অন্যদিকে কম্পিউটার বা ল্যাপটপের সঙ্গে মডেম ইন্টারনেট সংযোগ পাওয়ার জন্য ব্যবহৃত হবে।
৩. মাল্টিমিডিয়া কম্পিউটার বা ল্যাপটপ- যেসব কম্পিউটার বা ল্যাপটপে হেডফোন কার্যকর করা যাবে তাই মাল্টিমিডিয়া কম্পিউার।
৪. এছাড়া আইপি টেলিফোনী প্রযুক্তি সমৃদ্ধ মোবাইল সেট ব্যবহার করে এই সেবা পাওয়া যাবে তবে এই সেটে পিএসটিএন (পাবলিক সুইচড টেফিফোন নেটওয়ার্ক) সেবা পাওয়া সম্ভব হবে। বাজারে অনেক উন্নত ফোনে আইপি ডায়ালার রয়েছে যার মাধ্যমে আইপি টেলিফোনী সুবিধা পাওয়া সহজ হবে।
আইপি টেলিফোন
আইপি টেলিফোন প্রযুক্তি
কি ধরনের সেবা পাওয়া যাবে এই প্রযুক্তিতে
আইপি টেলিফোনীতে দুই ধরনের সেবা পাওয়া যাবে। একটি হচ্ছে ভয়েস কল সার্ভিস। অন্যটি হচ্ছে ডেটা সার্ভিস। আইপি টেলিফোনী ব্যবহার করার জন্য প্রত্যেক গ্রাহককে দেয়া হবে আইডি নম্বর| বিভিন্ন আইএসপি কোম্পানীর আইএসএন’র কোডসমূহ যেমন আইএসএন’র কোড ০৯৬০২, বিডিকমের ০৯৬৬৬, ঢাকা কমের ০৯৬১১, লিংক থ্রির ০৯৬৭৮, অগ্নির ০৯৬০৬ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। কোড ও গ্রাহক আইডি নম্বর মিলে পুরো আইডি হবে ১১ সংখ্যার। এই সেবা হ্যান্ডসেট, ফিক্সড সেট ও কম্পিউটারে ব্যবহার করা যাবে। কম্পিউটারে ও ল্যাপটপে কথা বলা যাবে হ্যাডফোনের সহায়তায়। আপাতত এই সুবিধা দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে আশা করা যাচ্ছে খুব শীঘ্রই দেশের বাইরে এই সুবিধা পাওয়া যাবে।
আইপি টেলিফোনীর সুবিধাসমূহ
এটি একটি নতুন ধারার টেলিকমিউনিকেশন হওয়ায় আইপি টেলিফোনীতে সুবিধা অনেক। এই প্রযুক্তিতে টেলিফোন সুবিধা শুধুমাত্র ল্যান্ডফোন (যেমন আমাদের দেশে টিএন্ডটি ফোন, পিএসটিএন ফোন) ও মোবাইলের মাঝে সীমাবদ্ধ নয়। বরং কম্পিউটার প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে এর বিস্তৃতি হতে পারে অনেক ব্যাপক। আইপি টেলিফোনীতে ভয়েস কল ছাড়াও ডেটা সার্ভিস পাওয়া যেতে পারে ব্যাপকভাবে। এখানে কথা বলার সঙ্গে সরাসরি মুখোমুখি হতে পারছেন আইপি টেলিফোন সেটের ডিসপ্লে বা প্রদর্শিত স্ক্রিনের মাধ্যমে। এই প্রযুক্তিতে ভিডিও কনফারেন্স করার অপার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে টেলিমেডিসিনের সুবিধা পাওয়া যাবে। এছাড়া এর মাধ্যমে বাস বা ট্রেনের টিকিট কাটা, অনলাইন ব্যাংকিং সুবিধা, অনেক জরুরী তথ্য পাবার ব্যবস্থা করা যাবে। এ ধরনের সেবাসমূহ অদূর ভবিষ্যতে পাওয়া সম্ভব হবে।
আনুষঙ্গিক খরচ কত
বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে অত্যন্ত সাশ্রয়ী মূল্যে কথা বলা যাবে আইপি টেলিফোনী প্রযু্‌ক্িত ব্যবহারের মাধ্যমে। শুরুতে একটি ফরম পূরনের মাধ্যমে নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। এর জন্যে ফি নির্ধারিত হয়েছে মাত্র ১০০ টাকা। যারা কম্পিউটার ব্যবহার করবেন না তাদের জন্য একটি আইপি টেলিফোন সেট ক্রয় করতে হবে। সঙ্গে ইন্টারনেট সংযোগের জন্য অ্যাডাপ্টার লাগবে। যাদের মাল্টিমিডিয়া সমৃদ্ধ কম্পিউটার বা ল্যাপটপ রয়েছে তাদের ইন্টারনেট সংযোগের জন্য মডেম লাগবে।
কিভাবে বিনামূল্যে কথা বলা যাবে
এই প্রযুক্তিতে যে কোনো আইপি টেলিফোন থেকে আইপি টেলিফোনে কথা বলা যাবে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। তবে আপাতত বিনামূল্যে কথা বলা গেলেও সরকার যে কোন সময় চার্জ নির্ধারন করতে পারে এমনটা জানা গেছে। এই চার্জ নির্ধারিত হতে পারে প্রতি মিনিটে ২০ পয়সা মাত্র।
অন্য অপারেটরে কথা বলার খরচ
আইপি টেলিফোনীতে মোবাইল ফোন বা অন্য অপারেটরে কল করা যাবে সেক্ষেত্রে চার্জ যুক্ত হবে। জানা গেছে, মোবাইল ফোনে কল করতে গেলে চার্জ যুক্ত হবে মাত্র ৬৫ পয়সা। তবে সরকারী ল্যান্ডফোন কর্তৃপক্ষ বিটিসিএলের সঙ্গে অচিরেই এই সংযোগ পাওয়া সম্ভব হবে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে আইপি টেলিফোন সেটের ইনস্টলেশনের জন্য কি চার্জ দিতে হবে তা এখনও নির্ধারিত হয়নি। এটি নির্ভর করবে সেট সংখ্যার উপরে যা আইএসপি (আইপি টেলিফোনী সেবাদাতা) প্রতিষ্ঠানসমূহ নির্ধারন করবে।
কবে থেকে বিদেশেও কথা বলা যাবে
আমাদের দেশের বিভিন্ন পেশার মানুষ বিদেশে অবস্থান করছেন। তারা দেশের জন্য অবদান রেখে চলেছেন। দেশের অর্থনীতিতে তাদের অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অথচ তারা যদি প্রিয় মাতৃভূমির সঙ্গে সুষ্ঠুভাবে যোগাযোগ সম্পন্ন করতে না পারেন তা আমাদের জন্য খুবই দুর্ভাগ্যজনক। তারা দেশের সঙ্গে সহজে ও সুলভে যোগাযোগ করতে পারলে তা দেশের জন্য সুফল বয়ে আনবে নিঃসন্দেহে। আইপি টেলিফোনীতে দেশের বাইরে থাকা প্রায় ১কোটি মানুষ কম খরচে কথা বলার সুযোগ পাবে। এ ব্যাপারে জানা গেছে, অতি শীঘ্রই এ সংক্রান্ত নির্দেশনা পাওয়া যাবে। এক্ষেত্রে যে চার্জ যুক্ত হবে তা বিটিসিএল নির্ধারন করবে।
ভিওআইপি এবং আইপি টেলিফোনী
আইপি টেলিফোনী একটি আধুনিক টেলিকমিউনিকেশন প্রযুক্তি। ভিওআইপি এবং আইপি টেলিফোনীর ব্যাকএনডে একই প্রযুক্তি ব্যবহৃত হলেও অবৈধ ভিওআইপিতে যে স্থান কল আসে তা শনাক্ত করা যায় না। যেমন কল আসার সময় দেখা যায়, বাংলা লিংক, গ্রামীণ ফোন, সিটিসেলের নাম্বার| কল আসছে দেশের বাইরে থেকে, কিন্তু শনাক্ত করা যাচ্ছে না। অথচ আইপি টেলিফোনীতে প্রতিটি ব্যবহারকারীর নাম্বার সহজেই শনাক্ত করা যায়। অবৈধভাবে ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত সকলদিক বিবেচনা না করার করণে এবং মানসম্মত ডিভাইস বা যন্ত্র ব্যবহার না করার ফলে  ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রটোকল সংক্ষেপে ভিওআইপির মাধ্যমে বিদেশে কথা বলার সময় লক্ষ্য করা গেছে কথা ভেঙ্গে ভেঙ্গে আসছে। অপরদিকে, আইপি টেলিফোনী প্রযুক্তিতে যে স্থান হতে কল আসে তা সহজেই শনাক্ত করা যায়। এই প্রযুক্তিতে নির্দিষ্ট গ্রাহককে শনাক্ত করা যায়। প্রযুক্তিগত সকলদিক বিবেচনা করার কারণে ও মানসম্মত যন্ত্র ব্যবহারের ফলে আইপি টেলিফোনীতে কথা শোনা যাবে সুপষ্টভাবে।
অবৈধ ভিওআইপি রোধ হবে এই প্রযুক্তি বিস্তারে
আইপি টেলিফোনী বিস্তারের ফলে দেশে অবৈধভাবে ভিওআইপি ব্যবসা অনেকাংশেই রোধ হবে। কারণ, আইপি টেলিফোনী অত্যন্ত সাশ্রয়ী প্রযুক্তি। এটা চালু হলে অবৈধ ভিওআইপি কলের দিকে মানুষের আগ্রহ হারিয়ে যাবে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে সেদেশের অভ্যন্তরে কল করতে যে খরচ হয় সে তুলনায় সেদেশের বাইরে কল করতে খরচ কম হয়। এটা একটা পলিসি। এভাবেও কিন্তু অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ভিওআইপি রোধ করা যেতে পারে। আরেকটিভাবে, তা হচ্ছে অনেক উন্নত দেশের মতো প্রযুক্তিকে সম্পূর্ণ উন্মুক্ত রাখা। সেক্ষেত্রে উপযুক্ত নীতিমালা প্রণয়ন করাটাই শ্রেয়।
আইপি টেলিফোনী প্রতিষ্ঠান হঠাৎ করে বন্ধ হবে কিনা
সমপ্রতি পিএসটিএন প্রতিষ্ঠানসমূহ যেমন র‌্যাংকসটেল, ঢাকাফোন, পিপলসটেল ইত্যাদি বন্ধ করে দেওয়া হয় অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসার অভিযোগে। আইপি টেলিফোনী প্রতিষ্ঠানসমূহে এ ধরনের কোনো সম্ভাবনা আছে কিনা। এ সম্পর্কে একটি আইএসপি প্রতিষ্ঠানের টেকনিক্যাল বিষয়ে অভিজ্ঞ টীম সদস্য জানালেন, এরকম কোনো সম্ভাবনা নেই। কারণ, তারা আগে থেকে এ বিষয়ে সচেতন রয়েছেন। তাছাড়া এই প্রযুক্তি অত্যন্ত সাশ্রয়ী এবং আইপি টেলিফোনী একটি ইন্টারনেট নির্ভর আধুনিক টেলিফোনী ব্যবস্থা। তারা সরকার থেকে যথাযথ নিয়ম মোতাবেক অনুমোদন পেয়ে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন সুতরাং আইপি টেলিফোনী সার্ভিস প্রতিষ্ঠানসমূহের কার্যক্রম অকস্মাৎ বন্ধ হবার কোনো সম্ভাবনা নেই এমনটাই বলা হচ্ছে আইএসপি প্রতিষ্ঠান থেকে।
আইপি টেলিফোনী বিষয়ে মোবাইল অপারেটর প্রতিষ্ঠান
আইপি টেলিফোনী বিষয়ে সারা দেশে আলোড়ন সৃষ্টি হলেও মোবাইল ফোন অপারেটর বা পিএসটিএন অপারেটরদের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া সম্ভব হয়নি। অথচ এ বিষয়ে তাদের সুস্পষ্ট বক্তব্য থাকা দরকার।
অবৈধ ভিওআইপি বন্ধ হলেও কল টার্মিনেশন অব্যাহত রয়েছে
অবৈধভাবে ভিওআইপি করার অভিযোগে অনেক ল্যান্ডফোন অপারেটর প্রতিষ্ঠান বন্ধ হলেও বাস্তবে কল টার্মিনেশন কিন্তু বন্ধ নেই। কোনো না কোনোভাবে এ ধরনের কল অব্যাহত রয়েছে। এটা সঠিকভাবে নজরদারি করা যাচ্ছে না। নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে পারলে দেখা যাবে অনেক অপারেটর ফেঁসে যাচ্ছেন। সেক্ষেত্রে এ প্রযুক্তি উন্মুক্ত থাকলে সরকার বরং লাভবান হবেন। প্রচুর কল অব্যাহত থাকবে। গত ২ বছর আগে গড়ে প্রতিদিন যেখানে ২ কোটি মিনিট কল হতো বর্তমানে তা গড়ে প্রতিদিন ৮ কোটি মিনিটে দাঁড়িয়েছে। ফলে অনেক বেশি রাজস্ব আদায় হচ্ছে। এ ব্যাপারে সরকারকে সুস্পষ্ট ব্যবস্থা নিতে হবে।
আইপি টেলিফোনীর নীতিমালায় পরিবর্ধন হওয়া জরুরী
আইপি টেলিফোনীর লাইসেন্স প্রক্রিয়ায় বর্তমানে যে নীতিমালা রয়েছে তাতে কিছু পরিবর্তন আনার দাবী আসছে। এই নীতিমালায় যুগোপযোগী আরো কিছু পরিবর্তন আনতে পারলে আইপি টেলিফোনী ভবিষ্যতে ব্যাপকভাবে বিস্তৃতি ঘটবে। বিশ্বে যেখানে প্রযুক্তির প্রসার ঘটছে দ্রুত সেখানে আরা পিছনের সারিতে অবস্থান করছি। আমাদের দেশে অনেক প্রযুক্তি সুস্পষ্ট ও কার্যকর নীতিমালার অভাবে বিকশিত হতে পারেনি। কল সেন্টারের ক্ষেত্রে এরূপ ঘটেছে। এরকম প্রযুক্তির আরো ক্ষেত্র রয়েছে। এ বিষয়গুলো সরকারকে এখনই বিবেচনায় আনতে হবে। আর তা করতে হবে দেশের প্রযুক্তির সার্বিক অগ্রসরতার স্বার্থে|
সকল ধরনের প্রযুক্তি উন্মুক্ত রাখা
সকল ধরনের প্রযুক্তি উন্মুক্ত রাখা এখন সময়ের দাবী। প্রযুক্তি কখনো অবৈধ হতে পারে না। যেমন বলা হচ্ছে অবৈধ ভিওআইপি। বরং সকল ধরনের প্রযুক্তি উন্মুক্ত থাকলে আমরা সামনের দিকে অগ্রসর হতে পারবো দ্রুত। তবে এইসব প্রযুক্তি উন্মুক্ত করার আগে একটি সর্বসম্মত নীতিমালার মাধ্যমে ঐক্যমতে আসতে হবে এমনই দাবী এ বিষয়ে অভিজ্ঞ প্রযুক্তিবিদদের।
বিশ্বের অনেক দেশে আইপি টেলিফোনী দারুনভাবে জনপ্রিয়। সেই সব দেশে ইন্টারনেট প্রটোকল বা আইপি নির্ভর যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে ওঠেছে। সে তুলনায় আমরা অগ্রসর হতে পারিনি। যদিও এখন একটা সম্ভাবনার সৃষ্টি হয়েছে। এই সুযোগকে আমাদের যথাযথভাবে কাজে লাগাতে হবে এবং প্রযুক্তিগতভাবে অগ্রসর হতে হবে। আর তা করতে পারলে আমাদের দেশে এ প্রযুক্তি জনপ্রিয় হবে এমনটা আশা করা হচ্ছে। আইপি টেলিফোনীর যথার্থ প্রয়োগ ও ব্যবহারের ফলে এ প্রযুক্তির বিস্তার ঘটবে নিঃসন্দেহে। সেক্ষেত্রে দরকার আরো স্বচ্ছতা ও জবাবদিহীতা।
এই প্রযুক্তি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের মতামত
আইএসপিএবির সভাপতি আখতারুজ্জামান মঞ্জ এর মতে, আমরা ভয়েস ও ডেটা দুই ধরনের সেবাই দিতে পারবো। আমাদের গ্রাহকরা দেশে ও বিদেশে কল করতে পারবেন। এ জন্য কেবল সরকারকে চার্জ বুঝিয়ে দিলেই হলো।
বিটিআরসির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) জিয়া আহমেদ এর মতে, আইপি টেলিফোনী সেবা সাশ্রয়ী ও দ্রুততম সময়ে এটি ছড়িয়ে দেয়া সম্ভব।
বিডিকম অনলাইনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুমন আহমেদ সাবির এর মতে, সাধারণ টেলিফোনের ক্ষেত্রে ল্যান্ড লাইন কিংবা সিম কার্ডের দরকার হয়। আইপি টেলিফোনীতে দরকার হয় ইন্টারনেট সংযোগ। বরং আইপি ফোনে আরো অনেক বেশি সুবিধা দেয়া সম্ভব।
সাক্ষাৎকার-
১. ডঃ মশিউর রহমান
আইপি টেলিফোনী বাংলাদেশে কী ধরনের প্রভাব বয়ে আনতে সক্ষম হবে বলে আপনি মনে করেন? এক প্রশ্নের উত্তরে ডঃ মশিউর রহমান বলেন, আসলে আইপি টেলিফোনী কী? আইপি এর মাধ্যমে যে টেলিফোন করা যায়, এই ব্যবস্থাকে আইপি টেলিফোনী বলে। এই প্রযু্‌ক্তি আমাদের দেশে যে ধরনের প্রভাব বয়ে আনবে, তাকে তিনি দুইভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। এক. আইএসপি প্রতিষ্ঠানের জন্যে, দুই. ব্যবহারকারীদের জন্যে। বর্তমানে আইএসপি প্রতিষ্ঠানসমূহকে যে অনুমোদন (লাইসেন্স কার্যকর করা) দেয়া হয়েছে, এতে করে এখনই আইপি টেলিফোনী সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানসমূহ এই ব্যবসা থেকে খুব বেশি লাভ তুলতে পারবে না। আরো ভালো ও নতুন কিছু সার্ভিস নিয়ে তাদের আসতে হবে। এ প্রসঙ্গে তিনি এই পলিসিতে আরো পরিবর্তন আসা দরকার বলে মনে করেন। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, সারা বাংলাদেশের যে কোন প্রান্তে ব্যবহারের পরিবর্তে কোন একটি এলাকার মধ্যেই এই সেবা দিতে হবে ঐসব আইপি টেলিফোনী সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানসমূহকে। এছাড়া আইপি টেলিফোনীতে অন্য অপারেটরে কথা বলার ক্ষেত্রে যে বাধ্যবাধকতা রয়েছে তা আইএসপি প্রতিষ্ঠানের জন্য সুবিধাজনক নয়। অর্থাৎ আইএসপি প্রতিষ্ঠানসমূহের জন্যে বর্তমান আইপি টেলিফোনীর লাইসেন্স পলিসি কোনো আমূল পরিবর্তন বয়ে আনবে না। অন্যদিকে, ব্যবহারকারীদের জন্য এই প্রযুক্তির ব্যবহার  বেশ কিছু নতুন সুবিধা বয়ে আনবে। বরং ব্যবহারকারীদের জন্যে এটি নিঃসন্দেহে আমূল পরিবর্তন বয়ে আনবে। যেমন, দেশের মধ্যে আইপি টেলিফোনী থেকে আইপি টেলিফোনীতে কথা বলা যাবে বিনা পয়সায়। এতে ব্যবহারকারী অত্যন্ত কম খরচে কথা বলতে পারবেন। এবং ভবিষ্যতে যেহেতু সব ধরনের যোগাযোগ ব্যবস্থা হবে আইপি (ইন্টারনেট প্রটোকল) এর উপর তাই ভবিষ্যতের জন্য আমরা প্রস্তুত থাকতে পারছি।
ডঃ মশিউর রহমানের মতে, আইপি টেলিফোনীর মাধ্যমে যে শুধুমাত্র ভয়েস সুবিধা পাওয়া যাবে তা নয়। এই প্রযুক্তিতে ডেটা সার্ভিস পাওয়ার সম্ভাবনা ব্যাপক। এই দিকটিকে তিনি বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন। যদিও এই বিষয়টিকে নিয়ে তেমন আলোকপাত করা হচ্ছে না। ডেটা সার্ভিসের আওতায় যে সুবিধাসমূহ পাওয়া যাবে তা নিম্নরূপঃ
ক. আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য
খ. স্টক তথ্য
গ. ই-মেইল ম্যাসেজ
ঘ. বাজার মূল্য
ঙ. খবর
চ. জরুরী তথ্য
অর্থাৎ এই সার্ভিসগুলো আইপি টেলিফোনের স্ক্রিনে প্রদর্শিত হতে পারে। তবে ডেটা সার্ভিস ছাড়াও  আরেকভাবে আইপি টেলিফোনীতে সুবিধা পাওয়া যাবে। এটি হচ্ছে ভয়েস এনাবেল সার্ভিস। যেসব মানুষ অন্ধ এবং অশিক্ষিত তাদের জন্যে আইভিআর (ইন্টারএ্যাকটিভ ভয়েস রিকগনিশন) এর সহায়তায় অনেক তথ্য ভয়েসের মাধ্যমে দেয়া সম্ভব হবে। অদূর ভবিষ্যতে এই সার্ভিসগুলো আসবে বলে তিনি মনে করছেন। এখানে উল্লেখ্য, ডঃ মশিউর রহমান আমাদের দেশে আইপি টেলিফোনী নিয়ে এর লাইসেন্স সংক্রান্ত পলিসি তৈরির শুরুর দিকে এই প্রযুক্তির পলিসি নিয়ে কাজ করেছিলেন। বর্তমানে তিনি এই প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছেন নিবিড়ভাবে।
২. সুমন আহমেদ সাবির, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বিডিকম অনলাইন লিঃ
আইপি
টেলিফোনীর সার্ভিস দেবার ব্যাপারে আপনারা কতটুকু প্রস্তুত?
বিডিকম অনলাইন লিঃ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক জনাব সুমন আহমেদ সাবির জানালেন, এ ব্যাপারে তারা প্রস্তুত রয়েছেন। তবে একটা দিকে কিছু সমস্যা রয়েছে। আর সেটি হচ্ছে আইপি টেলিফোনী থেকে মোবাইল অপারেটর বা পিএসটিএন এ কথা বলা যাচ্ছে। কিন্তু মোবাইল অপারেটর বা পিএসটিএন থেকে আইপি টেলিফোনীতে কথা গ্রহণ করতে সমস্যা হচ্ছে। মোবাইল অপারেটর বা পিএসটিএন অপারেটরা তাদের প্রয়োজনীয় কনফিগারেশন এখনও সম্পন্ন করতে পারেননি বলে এ অসুবিধা হচ্ছে। এ সমস্যা খুব শীঘ্রই সমাধান হবে বলে তিনি জানালেন। অর্থাৎ এর মাঝেই তারা কনফিগারেশনের যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করবেন। উল্লেখ্য, বিডিকম গত ডিসেম্বর ২০০৯ এর মধ্যে তাদের প্লাটফর্ম উন্নয়ন করেছেন। কাজেই তারা সম্পূর্ণ প্রস্তুত রয়েছেন বলে জানালেন।
বাংলাদেশে আইপি টেলিফোনীর সম্ভাবনা কতটুকু?
এদেশে আইপি টেলিফোনীর সম্ভাবনা কতটুক এক প্রশ্নের জবাবে সুমন আহমেদ সাবির বললেন, বিশ্বে সব ধরনের যোগাযোগ এখন আইপি নির্ভর। মোবাইলে থ্রিজি প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে তার ব্যাকএনডেও রয়েছে আইপি অর্থাৎ ইন্টারনেট প্রটোকল। বাংলাদেশে আইপি টেলিফোনীর যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। এখানে অবকাঠামোগত কিছু সমস্যা রয়েছে। যেমন আইপি টেলিফোনীর লাইসেন্স পলিসিতে কিছু পরিবর্ধন হওয়া দরকার বলে তিনি মনে করছেন। অবশ্য এ ব্যাপারে বিটিআরসির সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা আশ্বাস দিয়েছেন প্রয়োজনে পলিসিতে পরিবর্তন আনা হবে। এটা হলে বাংলাদেশে এককথায় আইপি টেলিফোনীর সম্ভাবনা অসীম। এ ধরনের প্রযুক্তির ব্যাপারে তিনি আরো জানালেন, আইপির মাধ্যমে সারা দুনিয়া একই লোকালে অর্থাৎ একটা নেটওয়ার্ক চলে আসবে।
kaoser Hossain
ইমেইল: kaoser1st@yahoo.com
  1. এলো আইপি টেলিফোনী, আইপি পিএবিএক্স এবং সফটওয়্যার সমাধান
  2. তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর পরামর্শ দিলেন রাষ্ট্রপতি
  3. মাইক্রোনেটের আইপি কেভিএম সুইচ
  4. চাই প্রযুক্তি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ
  5. পুরনো আইপিভি৪ ঠিকানা কিনছে মাইক্রোসফট

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন